ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার
কেঁচো সার একটি জৈব সার যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয় । ১ মাসের বাসী গোবর বা তরিতরকারির ফেলে দেওয়া অংশ,ফলমূলের খোসা,উদ্ভিদের লতাপাতা,পশুপাখির নাড়িভুঁড়ি হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, ছোট ছোট করে কাটা খড়কুটো খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যে সার তৈরি হয় তাঁকে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট বলা হয়। এ সার সব ধরনের ফসল ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। এটি পৃথিবীতে অধিক ব্যাবহৃত জৈব সারের অন্যতম,পরিবেশবান্ধব সার।
কেঁচো কম্পোস্টের উপাদানঃ
কেঁচো কম্পোস্টে অন্যান্য কম্পোস্টের চেয়ে প্রায় ৭-১০ ভাগ পুষ্টিমান বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে একটি আদর্শ ভার্মিকম্পোস্টে ১.৫৭% নাইট্রোজেন, ১.২৬% ফসফরাস, ২.৬০% পটাশ, ০.৭৪% সালফার, ০.৬৬% ম্যাগনেশিয়াম, ০.০৬% বোরণ, ১৮% জৈব কার্বন, ১৫-২৫% পানি ও সামান্য পরিমাণ হরমোন রয়েছে।
কেঁচো সার ব্যবহারের উপকারিতা
কেঁচো সার বা ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহার করলে ফসলের বা প্লান্টের উৎপাদন ও গুণাগুণ বৃদ্ধি পায় এবং চাষের খরচ কম হয়। উৎপাদিত ফসলের বর্ণ, স্বাদ, গন্ধ হয় আকর্ষণীয়। ভার্মি কম্পোষ্ট´ বা কেঁচো সারে মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। আর মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় বিধায় কেঁচো সার বা ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহারে সেচের পানি কম লাগে। ক্ষারীয় লবণাক্ত মাটিতেও চাষাবাদ সম্ভব। রোগ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। জমিতে আগাছার ঝামেলা কম হয়। ফসলের বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে। অধিক কুশি, ছড়া ও দানা গঠন হয়। মাটির বুনট উন্নত হয়। রাসায়নিক সারের চাইতে খরচ অনেক কম হয় এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে।
সাবধানতা
পিঁপড়া, উঁইপোকা, তেলাপোকা, গুবরেপোকা, মুরগি, ইঁদুর ,পানি ও বিভিন্ন পাখি কেঁচোর শত্রু। এগুলো কোনো কীটনাশক দিয়ে মারা যাবে না। তবে হাউসের চারদিকে কীটনাশক দেওয়া যাবে। প্রতি লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম গুঁড়ামরিচ, ১০০ গ্রাম হলুদের গুঁড়া ও সামান্য লবণ মিশিয়ে পিটের বাইরে চারিদিকে ছিটিয়ে দিলে এসব শত্রু দমন থাকে। ব্যবহৃত গোবরের সঙ্গে ছাই, বালু, ভাঙা কাচ ইত্যাদি রাখা যাবে না। মুরগি ও পাখির আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য হাউসের ওপর ঢাকনা দিয়ে রাখতে হবে। কেঁচোকে জীবিত ও সক্রিয় রাখতে হাউসে বেশি পানি দেওয়া যাবে না, আবার পানি শুকিয়ে ফেলাও যাবে না। চালনি দিয়ে চালার সময় হাউসে নির্দিষ্ট জাত ছাড়া অন্য জাতের কেঁচো থাকলে তা আর পরে সার তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে না।
উর্বর মাটিতে সাধারণত পাচঁ ভাগ জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু মাটির পানি ধারণক্ষমতা ও বায়ু চলাচল বাড়াতে পাঁচ ভাগ জৈব পদার্থ থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশের মাটিতে রয়েছে ১.৮ থেকে ২ ভাগ। জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়াতে কম্পোষ্ট সার, পচা আবর্জনা, সবুজ সারের যেমন ভূমিকা রয়েছে তেমনি কেঁচো সারের ভূমিকাও অসামান্য। তাই কেঁচো সার বা ভার্মিকম্পোস্ট সারে।
Reviews
There are no reviews yet.